ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়া থানার ক্যাশিয়ার কর্তৃক সড়কে গাড়ী থামিয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  পেকুয়ায় ক্যাশিয়ার পরিচয়ে সড়কে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। পণ্যবাহী গাড়ী ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে পেকুয়া থানা পুলিশের ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে দিব্যি চলছে এ সব চাঁদাবাজি।

পেকুয়ায় ক্যাশিয়ার প্রথায় পুলিশের এমন চাঁদাবাজিতে হয়রানি হচ্ছে সাধারন মানুষ। পন্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরও পুলিশের চাঁদাবাজি হয়েছেন অতিষ্ট। উপজেলা পেকুয়ায় বিভিন্ন প্রান্তে পেকুয়া থানা পুলিশের চাঁদাবাজি অ-প্রতিরুদ্ধ। থানার ওই কর্তাবাবু নেপথ্যে থেকে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। পুলিশের ম্যাচ চালাতে ওসির নির্দেশে এ চাঁদা আদায় হয়। পুলিশ কনষ্টেবল ও কর্মকর্তাদের খাওয়া দাওয়া ও ম্যাচ চলে এ সব চাঁদা থেকে। সড়কে গাড়ী থামিয়ে প্রকাশ্যে আদায় করা হয় চাঁদা।

ওই টাকা পুলিশের ব্যয়ভার নির্বাহ করে। রান্নাবান্না ও নাস্তা সব কিছু চলে উত্তোলিত টাকা থেকে। সকালে নাস্তা, দুপুরে ভাত ও রাতেও ভাত এ সব চলে ওই চাঁদার টাকায়। পেকুয়া থানায় পুলিশের ম্যাচ পরিচালিত হয় সড়ক থেকে আদায়কৃত টাকা থেকে। টাকা আদায় করতে পেকুয়া থানা পুলিশ ক্যাশিয়ার প্রথা চালু করেছে। পুলিশের কর্তব্যরত কোন কোন কনস্টেবলদের উপর এ দায়িত্ব অর্পন করে।

বিগত কয়েক বছর ধরে পেকুয়ায় ক্যাশিয়ার প্রথায় পুলিশের নামে টাকা আদায় চলছে। ক্যাশিয়ারের নিয়োগকৃত ব্যক্তি পুলিশের চাকুরীজীবি ছিল। তবে সম্প্রতি ওই প্রথা বিলুপ্তি হয়। এখন টাকা আদায়ে সরাসরি কোন পুলিশ সদস্য সম্পৃক্ত হন না। ঝোড় ঝামেলা এড়াতে পুলিশ ওই দায়িত্ব পাবলিকদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। টাকা আদায় হচ্ছে পাবলিককে দিয়ে। তবে থানা পুলিশ এ সব সার্বক্ষনিক নজরদারী ও মনিটরিং করছেন। টাকা উত্তোলন করতে ওসি দুই ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে। তারা কোন ননডকুমেন্টারী। মৌখিক অঙ্গীকার ও শর্তের মধ্যে জনগন থেকে এ ২ জনকে টাকা আদায়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, প্রতিদিন রাতে আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে থাকেন খোদ ওসি। দিনে কত টাকা আয় হয়েছে আর কি টাকা ব্যয় হয়েছে সেটি ওসিকে নিরুপন করতে হয়। সন্ধ্যা নাগাদ উত্তোলিত টাকা হস্তান্তর করতে হয়। নিয়োগকৃত ব্যক্তিরা টাকা আদায়ের পাশাপাশি থানার ম্যাচের বাজার করে থাকেন তারা। ম্যাচ পরিচালনা হয়ে থাকে দুটি ধাপে। বড় পরিসরে রান্নাবান্না করতে হয় পুলিশ কনষ্টেবলদের জন্য। ওসির রান্না ও খাওয়ার দাওয়া পৃথক।

একটি সুত্র জানায়, প্রতি সপ্তাহে থানার বড় কর্তার জন্য ৬ টি দেশীয় মুরগীর যোগান দিতে হয় ক্যাশিয়ারকে। এ ছাড়া মুঠোফোন বিল, বাড়ীতে বিকাশে টাকা প্রেরন ও পরিবারের বাজারও ক্যাশিয়ারকে যোগান দিতে হয়। স্ত্রী ও ছেলে সন্তানদের জন্যও মাঝে মধ্যে পেকুয়া থেকে টাকা পন্যের যোগান দিতে হয়। থানার নিজস্ব মেহমানও অতিথিদের আপ্যায়নও এ ক্যাশিয়াররা করে থাকেন।

অভিযোগ উঠেছে, পেকুয়া থানার  ম্যাচ পরিচালনার পাশাপাশি প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিযুক্ত ক্যাশিয়ারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। সম্প্রতি পেকুয়ায় পুলিশের চাঁদাবাজিতে মানুষ দিশেহারা হয়েছে।

উপজেলার অন্তত ৫ টি পয়েন্টে পুলিশের নামে চলছে দিব্যি চাঁদাবাজি। পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজার পয়েন্টে পুলিশের লোক আছে। ওই পয়েন্ট থেকে আদায় হচ্ছে টাকা। সদর ইউনিয়নের কলেজ গেইট চৌমুহনী চৌরাস্তা মোড়ে সার্বক্ষনিক নিযুক্ত থাকে ক্যাশিয়ার। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পেকুয়াগামী যানবাহন ও পেকুয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া পণ্যবাহী গাড়ী থেকে আদায় হচ্ছে টাকা। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে সর্বনিন্ম ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। লবণবাহী ট্রাক থেকে নেয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া কাঠবাহী ট্রাক ও মিনিট্রাক থেকেও চলছে টাকা আদায়। উপকুলের উৎপাদিত শুটকিও সমুদ্র থেকে আহরিত মৎস্যবাহী গাড়ী থেকেও টাকা নেয় পুলিশ। একইভাবে সমুদ্র থেকে আহরিত পোনা থেকেও পুলিশকে টাকা দিতে হয়।

পেকুয়ার সব মাদক আস্তানা ও মাদক বিক্রেতাদের সাথে ক্যাশিয়ারদের সম্পর্ক ভাল। তারাও অবাধে এ অবৈধ ব্যবসা চালাতে পুলিশকে ক্যাশিয়ারের মাধ্যমে মাশোহারা দেয়। এ ছাড়া পাহাড়ী মাটি পাচার ও পাহাড় ভূমি বিকিকিনিতেও ক্যাশিয়ারকে টাকা দিতে হয়। ইটভাটা ও করাতকল সমুহ থেকেও তারা টাকা নেয়। অবৈধ ব্যবসা ও পন্য বিকিকিনিতেও ক্যাশিয়ারদের সাথে বশ হতে হয়।  পেকুয়ায় এমন কোন স্থান নেই যেখান থেকে পুলিশ টাকা নেন না। ক্যাশিয়াররা টাকা আদায়ের মুল স্তম্ভ।

সুত্র জানায়, পেকুয়ায় পুলিশ ২ জনকে ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে রাস্তায় দাড় করিয়ে টাকা নেয়। পূর্ব গোঁয়াখালীর মৃত এলাহাদাদের ছেলে নেজাম উদ্দিন ও একই এলাকার দুধু মিয়ার ছেলে এনাম উদ্দিন ছাড়াও বাগগুজারা ব্রীজ এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে নাছির উদ্দিনসহ ৩ ব্যক্তি পুলিশের ক্যাশিয়ার। তারা পৃথক স্থানে দায়িত্ব বন্টন পেয়েছেন। সকাল থেকে রাত শিপ্টে তারা টাকা আদায় করেন। পরিধি অধিক বিস্তৃতি হওয়ায় এ ৩ জন দৈনিক বেতনে আরও কয়েক জনকে টাকা আদায়ে দায়িত্ব বন্টন করেছেন।

পেকুয়ায় ক্যশিয়ার প্রথায় চলছে বিরামহীন চাঁদাবাজি। পেকুয়া থানা পুলিশের ওসির বডিগার্ড নুরুল ইসলাম ডালিম ক্যাশিয়ার সিষ্টেমের দেখভাল করেন। মনিটরিং ও আদায়কৃত টাকার হিসাব নেন ওই পুলিশ কনষ্টেবল। তিনি মুলত থানার বড় কর্তার  প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন বলে সুত্র নিশ্চিত করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, আসলে আমাদের থানায় পুলিশ যে ভাবে করছে মনে হচ্ছে না বাংলাদেশের আর কোথাও আছে।

মগনামার লবণ ব্যবসায়ী জয়নাল আবদীন, আবুল কালাম, কামরুল আজিম, মনির উদ্দিন জানায়, আমরা প্রতি গাড়ীতে পুলিশকে টাকা দিই। চৌমুহনী মোড়ে ক্যাশিয়ার গাড়ী প্রতি ২শ থেকে ৫শ টাকা নেয়। হরিণাফাড়ির এক ব্যক্তি জানায়, আমি ইট নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়ী থামিয়ে পুলিশ ১২ হাজার ৫শ টাকা নেয়।

কাঠ ব্যবসায়ী জানায়, পুলিশের ম্যাচ চালায় আমরা। তারা বেতনভূক্ত কর্মচারী। অথচ রান্না ও খাওয়ার চালাতে হয় আমাদেরকে। এটি কোন ধরনের আইন আমরা বুঝিনা। কিছু বললে ভয় লাগে। এরপরও ছেলে, স্ত্রী সন্তানদের রিজিকের টাকা পুলিশকে দিতে হয়।

এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার ক্যাশিয়ার নুরুল ইসলাম ডালিম জানায়, প্রতি থানায় ক্যাশিয়ার থাকে। সে হিসেবে পেকুয়াতেও আছে। অনেকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাবেক ক্যাশিয়ারকে বিদায় করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: